1. [email protected] : [email protected] :
  2. [email protected] : Majnu : Majnu
রম্যগল্প : ফেসবুক সেলিব্রেটি নিলু ভাই - Banglanama.com
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:১১ পূর্বাহ্ন

রম্যগল্প : ফেসবুক সেলিব্রেটি নিলু ভাই

  • আপডেট সময়: শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১
  • ৪৩০ বার দেখা হয়েছে

ইমন চৌধুরী

নিলু ভাই একটা কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। সিদ্ধান্ত কঠিন হলেও তার অবস্থা আগের মতোই তরল! মানে স্বভাব-চরিত্রে খুব একটা পরিবর্তন নেই।
‘মাত্র এক মাস! তারপর দেখবি এই নিলু আর আগের নিলু নেই। এই এক মাসের মাথায় ফেসবুক সেলিব্রেটি হয়ে আমি সবাইকে দেখিয়ে দেব। আমার প্রতিটি ছবিতে, প্রতিটি স্ট্যাটাসে দেখবি কেবল লাইকের বন্যা।’ গম্ভীর মুখে ছাদে পায়চারী করতে করতে বললেন নিলু ভাই।
‘অ।’ আমি হাই তুলি। নিলু ভাইয়ের পরিকল্পনা শুনে আমার ঘুম পায়। হাসিও পায়। তবে হাসির চেয়ে ঘুমটা বেশি পায়।
‘অবশ্য তোরও একটু হেল্প লাগবে। প্রথমদিকে তোকেও কিছু লাইক ম্যানেজ করে দিতে হবে।’
‘আমি কীভাবে লাইক ম্যানেজ করব! আমার কি লাইকের দোকান আছে!’ নিলু ভাইর প্রস্তাব শুনে যথারীতি বিরক্ত আমি।
কিন্তু আমি বিরক্ত হলেও নিলু ভাই তার থোড়াই কেয়ার করেন। মুখ ঝামটা মেরে বললেন, ‘আমি চাই না তোকে উল­ুকের সঙ্গে তুলনা করতে, কিন্তু তুই নিজেই আমাকে বারবার বাধ্য করিস। লাইক ম্যানেজ করতে লাইকের দোকান থাকতে হবে কে বলল তোকে! তুই প্রথমত তোর নিজের লাইকটা দিবি। এরপর বিভিন্ন ছদ¥ নামে আরও গোটা দশেক অ্যাকাউন্ট খুলে নিবি। সেসব অ্যাকাউন্ট থেকেও গণহারে লাইক সাপ্লাই দিয়ে যাবি। আর ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে যে টাকা লাগে না, অন্তত এই জ্ঞানটুকু আশা করি তোর আছে!’
‘বললেই হলো! এতগুলো আইডির পাস ওয়ার্ড মনে রাখতেই তো একজন চ্যার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট নিয়োগ দিতে হবে! আমি মনে রাখতে পারব না।’
‘তোর স্মৃতিশক্তি যে ব্রয়লারের মুরগির চেয়েও নিæমানের সে কথা আর মনে করিয়ে দিতে হবে না। আমি জানি। তোর কষ্ট করে পাসওয়ার্ডও মনে রাখতে হবে না। একটা সাদা কাগজে সবগুলো পাসওয়ার্ড লিখে রাখবি, ব্যস! আমিও এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলব।’
‘এভাবে কতদিন লাইক দিয়ে যাব? মাস পিপল মানে আমজনতা লাইক না দিলে ফেসবুক সেলিব্রেটি হওয়া যায় না। তাছাড়া ফেসবুক সেলিব্রেটি হয়েই বা কী হবে!’
‘তুই বুঝবি না। একটা ব্যাপার আছে।’
‘অ।’ আমি উদাস দৃষ্টিতে পাশের বিল্ডিংয়ের তিনতলার বারান্দায় তাকিয়ে থাকি। একটা বই হাতে বারান্দায় পায়চারী করছে বেশ রূপবতী একটা মেয়ে। মেয়েটার খবর নিতে হবে। মনে হয় পাড়ায় নতুন এসেছে।
‘কী হলো! কই মাছের মতো ঝিম মেরে বসে আছিস কেন?’ নিলু ভাইয়ের বাজখাঁই কণ্ঠ শুনে সম্বিত ফিরে এলো আমার। একটু থেমে নিলু ভাই ফের বললেন, ‘কেবল আমাদের দু’জনের লাইকে কাজ হবে না। সেলিব্রেটি হতে আরও অনেক লাইক লাগবে। তুই তোর বন্ধুদেরও বলবি লাইক দিতে। শুনেছি টাকা দিলে নাকি ফেসবুকে অটো লাইকও পাওয়া যাচ্ছে আজকাল। ভালো করে খবরটা নিতে হবে।’
টাকার কথা শুনেই আমি সতর্ক হয়ে যাই। নির্ঘাত আমার মানিব্যাগের খবর আছে। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বলি, ‘ওসব অটো লাইক-পাইক সব ভুয়া কথা। অটো লাইক লাগবে না। আমি আমার বন্ধুদেরও রিকোয়েস্ট করব তোমার ছবি এবং স্ট্যাটাসে লাইক দিতে। সবাই মিলে লাইক দিলে আশা করি ভালো একটা অ্যামাউন্ট দাঁড়িয়ে যাবে।’
দু’দিন ধরে খেটেখুটে আমি এবং নিলু ভাই মিলে গোটা বিশেক ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলি। তৃতীয় দিন নিলু ভাই তার প্রথম স্ট্যাটাসটি দিলেন। লাইকের সংখ্যা হলো উনিশ। একটা আমার মূল অ্যাকাউন্ট থেকে। বাকি আঠারটা আমাদের দু’জনের ফেক আইডি থেকে। চতুর্থ দিনেই নিলু ভাইয়ের স্ট্যাটাসে লাইকের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে গেল। বিশেষ রিকোয়েস্টে এরমধ্যে আমার বন্ধুদের অনেকে লাইক দিতে শুরু করেছে। পঞ্চম দিনে প্রথমবারের মতো অপরিচিতা অনন্যা নামে একটা অচেনা মেয়ের লাইক পড়ল নিলু ভাইয়ের স্ট্যাটাসে। নিলু ভাই খুশিতে গদগদ। এরপর নিয়মিতই নিলু ভাইয়ের স্ট্যাটাসে অপরিচিতা অনন্যার লাইক পড়তে লাগল। একসময় শুরু হলো দু’জনের নিয়মিত চ্যাটিং। মোটামুটি এক মাসের মাথায় দু’জন দু’জনের প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করল। মেয়েটি দেখতে মোটামুটি সুন্দরীই বলা চলে। আমিও উৎসাহ দিতে থাকি। রাতভর চলতে থাকে দু’জনের চ্যাটিং। একদিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে নিলু ভাই বললেন, ‘বিকেলে একটু ফ্রি থাকিস। তোকে নিয়ে এক জায়াগায় যাব ভাবছি।’
‘কোথায়?’
‘তোর হবু ভাবির সঙ্গে মিট করব।’
‘কনগ্র্যাচুলেশন! কিন্তু আমি গিয়ে তোমাদের বিরক্ত করা কি ঠিক হবে?’
‘সমস্যা নেই। প্রথম দেখা তো। একটু নার্ভাস লাগছে। তুই থাকলে একটু সাহস পাব।’
অগত্যা বিকেলে সেজেগুজে আমি আর নিলু ভাই তার প্রেমিকার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রওনা দিলাম। স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পুকুরপাড়। সময় বিকেল ঠিক ৪টা। লাল রঙের একটা ফতুয়া পরলেন নিলু ভাই। আয়নায় ঘুরে ফিরে কিছুক্ষণ দেখলেন নিজেকে। তারপর বললেন, ‘চল।’
ঠিক চারটায় জনপ্রিয় একটা হিন্দি গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পুকুরপাড়ে হাজির হলাম দু’জন। কিন্তু অপরিচিতা অনন্যার তখন পর্যন্ত কোনো খবর নেই। অস্থির চিত্তে পুকুরপাড়ে পায়চারী করতে লাগলেন নিলু ভাই। তার পিছু পিছু আমিও। বিকেল সাড়ে ৪টায় আট-দশ বছরের একটি ছেলে এসে নিলু ভাইয়ের সামনে দাঁড়াল। কিছুটা ইতস্তত করে বলল, ‘আপনি কি নিলু ভাই?’
‘হুম, আমিই নিলু। তোর মতলবটা কী বল তো?’ ছেলেটা জবাব না দিয়ে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল। তারপর যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে দৌড়ে পালাল। নিলু ভাই চিরকুট খুলে বিড়বিড় করে পড়তে লাগলেন, ‘অ্যাই গাধা অ্যাই! ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের স্ট্যাটাসে নিজেই লাইক দিতে লজ্জা করে না তোর? তুই তো একটা গাধা!’ পড়তে পড়তে মুখটা কিশমিশের মতো কুচকে ফেললেন নিলু ভাই। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার বন্ধু জনিকে বলেছিলাম কোনো মেয়ের নামে একটা ফেক আইডি খুলে নিলু ভাইকে একটু সায়েস্তা করতে। অপরিচিতা অনন্যা নামটা ওকে আমিই দিতে বলেছিলাম। জনিটা বরাবরই একটু ত্যাঁদড়। মনে হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাটা একটু বেশিই হয়ে গেছে!

Facebook Comments Box

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

এই বিভাগের আরো সংবাদ দেখুন