ওয়াদুদ খান
ই-বুক টাকা দিয়ে কিনে পড়ে অনেকেই। এই বইগুলো ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, নেয়া যায় না ঘ্রাণও। তবুও অনেকে কেনে। অথচ, যারা ই-বুক কিনে পড়ে, তারাই যদি আরেকটু আন্তরিক হতো, তবে কিনতে পারত বইয়ের প্রিন্টেড কপি। এতে লাভবান হতো লেখক-প্রকাশক। আর পাঠকের চোখের বারোটাও বাজত না।
বইয়ের ভাঁজ খুলে পৃষ্ঠা উলটিয়ে পড়া, আর ই-বুকে আঙুল দিয়ে স্ক্রলিং করে ই-বুক পড়া— দুটোর ফিলিংস কোনোদিন এক হবে না।
এই প্রজন্ম বই-পড়া থেকে দিনকে দিন দূরে সরে যাচ্ছে। যারা পড়ে তাদের বিশাল একটা অংশ খোঁজাখুঁজি করে ই-বুক, পিডিএফ, অথবা প্লে-স্টোর।
এতে করে আমাদের প্রকাশনা শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বাধ্য হয়ে সব লেখকই হয়তো ই-বুকের দিকে ঝুঁকবে।
ই-বুকের সুবিধা হচ্ছে— এখানে টাকা-পয়সা লগ্নি করতে হয় না। যা বিক্রি হবে— তা-ই লাভ। কারো কোনো ঝুঁকি থাকছে না। লেখক যা কমিশন পাবেন, তাতেই শান্তি।
কিন্তু ক্ষতি হবে সামগ্রিকভাবে।
একদিন প্রকাশনা শিল্প ধ্বংস হবে। এর সাথে যারা জড়িয়ে আছে তাদের কর্মসংস্থান তথা আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। দীর্ঘসময় ধরে ই-বুক, অ্যাপ, পিডিএফ পড়ার কারণে পাঠকের চোখের বারোটা তো বাজবেই।
যারা ই-বুক পড়ে, তাদের অভিযোগ বইয়ের দাম বেশি।
একটিবার ভাবুন তো, গত এক বছরে কোন জিনিসের দাম বাড়েনি। কাগজের দাম, কালির দাম তো বেড়েই চলেছে।
এখনকার দিনে বই লিখে একজন লেখক কয় টাকা সম্মানী পায়?
খোঁজ নিলেই সত্যিটা জানতে পারবেন।
বেশিরভাগ লেখক নিজের টাকায় বই বের করে। অনেকক্ষেত্রে গিফট দিয়ে বই শেষ করে ফেলে। এভাবে হয়তো একবার বই বের করা যায়। বারবার যায় না। একারণে অনেক তরুণ লেখক হারিয়ে গেছে, যাচ্ছে, যাবে।
বই কিনে আপনার প্রিয় লেখকের পাশে দাঁড়ান।
নইলে ক্ষতি হবে আমাদেরই।
এক কাপি কফি তো আমরা চল্লিশ টাকায় কিনে খাচ্ছি। একশো টাকা দিয়ে একটা বই (আড়াই কাপ কফির দাম) কিনতে গেলে আমাদের হা-হুতাশ চোখে পড়ার মতো। মনে হয়, একশো টাকার একটা বইয়ে একশো টাকাই লাভ থাকে লেখকের।
© ওয়াদুদ খানের কথামালা